পরিচিতি

প্রারম্ভিকা

সত্যের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধ এর মধ্যেই মোসলমানদের শ্রেষ্ঠত্ব নিহিত। এ কাজ সাধ্যানুযায়ী সর্বাত্মকভাবে আন্জাম দেওয়া প্রত্যেক মুসলমানের  ঈমানী দায়িত্ব। বিশেষ করে ছাএসমাজ এ কাজের যোগ্য সৈনিক। কারণ ছাএসমাজই দেশ ও জাতির সক্রিয় ও কার্যকর জনশক্তি। এরা দেশের অমূল্য সম্পদ, ভবিষ্যত কর্ণধার। ছাএদের ক্লান্তিহীন শ্রম, অপ্রতিরোধ্য শক্তি এবং তীক্ষ্ণ মেধার সঠিক চর্চা ও প্রয়োগের উপর নির্ভর করে দেশের  গতি-প্রকৃতি, সুখ-সমৃদ্ধি তথা জাতির আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। ছাএদের শ্রম দেশগড়ায় ও মানব কল্যাণে প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের শাক্তি অন্যায়-অবিচার জুলুম তথা বাতিলের বিরুদ্ধে আর তাদের মেধা সত্য অন্বেষণ, দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণে ব্যবহৃত হওয়ার মাধ্যমেই সার্থক হয়ে ওঠে। ছাএজীবনই সৎ ও আদর্শ মানুষ হওয়ার প্রথম সোপান।

ছাএদের  মন ও মানস সর্বদাই অনুসন্ধিৎসু। একজন সচেতন ছাএের সম্মুখে থাকে দু'টি প্রশ্ন। একটি, জীবন-জিজ্ঞাসা; সে কোত্থেকে এসেছে, এ দুনিয়ার জীবনে তার কারণীয় কী এবং পরিণামে তার গন্তব্য কোথায়? দ্বিতীয়টি, যুগ-জিজ্ঞাসা; দেশব্যাপী অন্যায়, অবিচার, জুলুম, নির্যাতন, হাহাকার, অশান্তি কেন? দেশের স্থায়ী শান্তি এবং মানুষের সার্বিক মুক্তির পথই বা কী? নৈতিক আদর্শ বিবর্জিত বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা এসবের উত্তর দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তাছাড়া বিদ্যমান জাহিলী সমাজব্যবস্থার ধারক ও বাহকেরা ছাএদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে অক্ষম। আমাদের অনেকেই নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্য ছাএসমাজকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। তারুণ্যের শ্রম, শক্তি ও মেধা ভুল পথে পরিচালনার মাধ্যমে এই বিভ্রান্ত নেতৃত্ব নিষ্কলুষ ছাএসামজের মসৃণ ও নির্মল ঐতিহ্যকে কলঙ্কময় করে তুলছে।
বারবার আমাদের সরকার পরিবর্তনে ছাএসমাজের বলিষ্ঠ ভূমিকা থাকলেও শিক্ষাঙ্গণে সুষ্ঠ পরিবেশ কখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। হয়নি তাদের দাবি দাওয়ার বাস্তব প্রতিফলন। যার কারণে ছাএদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম হতাশা। তারা আস্থা হারিয়ে ফেলছে নৈতিকতা বিবর্জিত এই ধর্মহীন শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি। তাদের  মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে যুদ্ধংদেহী মনোভাব। ছাএদের এহেন ভূমিকার কারণে সমগ্র জাতি আজ এরূপ নাজুক ও সংকটময় মুহূর্তের কথা চিন্তা করে দেশের বিশিষ্ট উলামায়ে কেরাম, পীর মাশায়েখ এবং দীনদার বুদ্ধিজীবীগণের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ছাএদের ভবিষ্যৎ কল্যাণ চিন্তায় এবং তাদের শ্রম, শক্তি ও মেধার সঠিক চর্চা করে শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ সৃষ্টি, আদর্শ মানুষ হওয়ার শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন সাধন করে ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে পরিপূরক শক্তি হিসেবে ভূমিকা পালনের নিমিত্তে দেশের সর্বস্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিশ্রুতিশীল, প্রতিভাবান ও প্রতিনিধিত্বশীল ছাএদের নিয়ে ১৯৯১ সালের ২৩ আগষ্ট, শুক্রবার ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাএ আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশের তরুন ছাএসমাজকে চারিত্রিক ও নৈতিক অধঃপতন থেকে তুলে এনে সিরাতুল মুস্তাকীমে পরিচালিত করে মুসলিম মিল্লাতের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ঐতিহ্যের অভিমুখে পরিচালিত করার লক্ষ্যেই আমাদের এ অভিযাত্রা।

লক্ষ্য-উদ্দেশ্য

  লক্ষ্য : জাহিলিয়াতের সকল প্রকার আধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী খোলাফায়ে রাশেদার নমুনায়-সাহাবায়ে কেরামের অনুসৃত পথে মানবজীবন গঠন ও সমাজের সর্বস্তরে পূর্ণ দীন বাস্তবায়ন।
উদ্দেশ্য : আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন।
এ লক্ষ্য হাসিলের জন্য ইশা ছাএ আন্দোলন প্রণয়ন করেছে সুচিন্তিত পাঁচ দফা কর্মসূচী।

কর্মসূচী

১. ইলম ও তারবিয়াত (জ্ঞানার্জন ও প্রশিক্ষণ)
২. আমল ও তাযকিয়াহ (আমল ও আত্মশুদ্ধি)
৩. তাবলীগ (দাওয়াত)
৪. তানজীম (সংগঠন)
৫. ইনকিলাব (বিপ্লব)

১. ইলম ও তারবিয়াত

১.১ তরুণ ছাএসমাজকে ইসলামী আদর্শে গড়ে তোলার লক্ষ্য ইসলামের সঠিক জ্ঞান অর্জনে উদ্বুদ্ধ করা।
১.২ ইসলামী ও আধুনিক শিক্ষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন এবং প্রচলিত ধর্মহীন শিক্ষা ও মানবরচিত সকল মতাদর্শের অসারতা অনুধাবনে উৎসাহিত করা।
১.৩ জাহিলিয়াতের সকল প্রকার চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় ইসলামী সমাজবিপ্লবের যোগ্য কর্মী হিসেবে গড়ে তোলার সার্বিক প্রচেষ্টা চালানো।

২.  আমল ও তাযকিয়াহ

২.১ ব্যক্তিজীবনকে ইসলামী শরীয়তের আলোকে সুন্নাত তরীকায় গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালানো।
২.২ সর্বাবস্থায় সকল কাজে আল্লাহ তায়ালার জিকির জারী রাখা।
২.৩ আল্লাহওয়ালা ব্যক্তিদের সোহবত লাভের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির প্রচেষ্টা চালানো। 
২.৪ জাহেরী ও বাতেনী নেক আমল অর্জন এবং বদ আমল বর্জনের চেষ্টা করা।

 ৩. তাবলীগ

সকল প্রকার তাগুতী মন ও পথ অস্বীকার করে জীবনের সর্বক্ষেএে আল্লাহ তায়ালার সার্বভৌমত্ব ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শরীক হবার আহবান কারা।

৪. তানজীম

৪.১ যে সকল তরুণ শিক্ষার্থী আন্দোলনের উদ্দেশ্যের সাথে একমত হয়ে জীবনের সর্বস্তরে কুরআন সুন্নাহর আইন তথা ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শরীক হতে আগ্রহী তাদেরকে সংগঠনের অধীনে সংঘবদ্ধ করা।
৪.২ শিক্ষাঙ্গনসহ সর্বত্র ছাত্রসমাজের মাঝে সংগঠন গড়ে তোলার মাধ্যমে আন্দোলনের সম্প্রসারণ ঘটানো।

৫. ইনকিলাব

৫.১ শিক্ষাঙ্গনের সমস্যাবলী চিহ্নিত করে শান্তিপূর্ণ উপা্য়ে তা দূরীকরণের জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালানো।
৫.২ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নির্দেশিত ও অনুমোদিত কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা।
৫.৩ সকল প্রকার ইসলামবিরোধী কার্যকলাপের অবসান ঘটিয়ে সমাজ ও রাষ্টের স্থায়ী শান্তি এবং মানবতার সার্বিক মুক্তির লক্ষ্য দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে ইসলামী বিপ্লব সাধনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো।

 সাংগঠনিক কাঠামো

কেন্দীয় সংগঠন, জেলা শাখা, মহানগর শাখা, থানা শাখা, পৌর শাখা, ইউনিয়ন শাখা, ওয়ার্ড শাখা ও প্রতিষ্ঠান শাখাসমূহের সমন্বয়ে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাএ আন্দোলনের সাংগঠনিক কাঠামো গঠিত হবে।

যোগদানের নিয়ম

ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাএ আন্দোলের কাজের মানোন্নয়নের জন্য আমলের ৩টি স্তর থাকবে :
১. সদস্য।
২. কর্মী।
৩.মুবাল্লিগ।
সদস্য : যদি কোন শিক্ষার্থী ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের উদ্দেশ্যের সাথে একমত হয়ে কর্মসূচী ও কর্মপদ্ধতির উপর আস্থাবান হন এবং সঠিক ইসলামী জীবন-যাপন ও আন্দোলনের সামগ্রিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন, তাহলে নির্ধারিত ফরম পূরণের মাধ্যমে তিনি সংগঠনের সদস্য হতে পারবেন।

দৈনন্দিন কর্মসূচী

১. পাঁচ ওয়াক্তসালাত জামাতের সাথে আদায় ও তাহাজ্জুদের অভ্যাস গড়ে তোলা। ফরয সালাতের পর অন্তত কিছু সময় জিকির, অজিফা, কুরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি নফল ইবাদতে মশাগুল থাকা। সকল অবস্থায়, সর্বদা জিকরুল্লাহ ও দরুদ শরীফ জারী রাখা।
২. নিয়মিত কুরআন-হাদীস, মাসআলা-মাসায়েল, সাংগঠনিক বই-পুস্তক ও পত্র-পত্রিকা পড়া।
৩. দৈনিক অন্তত এক ব্যক্তিকে সংগঠনের দাওয়াত দেওয়া। 
৪.আল্লাহর পথে জানমাল কুরবানী কারার জযবা সৃষ্টি করা।
৫. দৈনন্দিন পারস্পরিক লেনদেনে স্বচ্ছাতা এবং আচার -আচরণ মার্জিত হওয়ার দিকে লক্ষ্য রাখা।
৬. প্রত্যহ কা্রো কোন উপকার করা।
৭. নিদ্রার পূর্বে মুহাসাবায়ে নফস (আত্মপর্যালোচনা) করা।
৮. দীন প্রতিষ্ঠার নিয়তে প্রতিদিন দু'রাকাত সালাতুল হাজত আদায় করা।

বৈশিষ্ট্য

ইসলামী আদর্শ বিবর্জত জাহেলী সমাজব্যবস্থার পরিবর্তনে নবী রাসূলগণের (সা:) উত্তরসূরী উলামায়ে কেরামের অনুপ্রেরণা, দিকনির্দশনা ও তত্ত্ববধানে পারিচালিত একটি ছাত্র কাফেলা।
আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে ইসলামী সমাজ গঠনের সার্বক্ষণিক জিহিদে একটি পরিপূরক শাক্তি।
রূহানিয়াত ও জিহাদের একটি সমন্বিত প্রয়াস।
প্রচলিত দলকেন্দিক মানসিকতা নয়, বরং আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকারের ঈমানী দায়িত্ব পালনের একটি প্রক্রিয়া।

সংগ্রামী ছাত্র ভাইয়েরা !

আসুন, আল্লাহর দেয়া জীবন-যৌবন, শ্রম, শক্তি ও মেধা তাঁরই নির্দশিত পথে পরিচালিত করে অন্যায়-অসত্য ও অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গড়ে তুলি। দেশের স্থায়ী শান্তি ও মানবতার সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে সর্বপ্রকার ইসলামবিরোধী কার্যকলাপের অবসান ঘটিয়ে ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলি এবং জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ-এ শরীক হয়ে স্বীয় জীবনকে আল্লাহর রং এ রঙ্গীন করি। আল্লাহ আমাদেরকে কবুল করুন।
বিস্তারিত জানতে আরো পড়ুন 
এসো মুক্তির মোহনায়
এসোমোক্তির রাজপথে 
কালিমায়ে তায়্যিবার দাবি
আমেরদের লক্ষ্য ও পথ চলার নীতি 
পাঁচ দফা কর্মসূচীর যৌক্তিকতা বিশ্লষণ
নীতির পরিবর্তন চাই 
আল্লাহর পথে সংগ্রাম
নীতিমালা কর্মকৌশল এবং 
ছাত্র সমাচারসহ নিয়মিত প্রকাশনা

প্রকাশানয়

 ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন 

কেন্দীয় কার্যালয় 
৫৫/বি, পুরানা পল্টন (৩য় তলা), ঢাকা-১০০০
ফোন : ৯৫৫৭১৩১
ওয়েবসাইট : www.iscabd.org

1 টি মন্তব্য: