রবিবার, ৯ মার্চ, ২০১৪

বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা : চরমোনাই দরবার শরীফে আখেরী মোনাজাতে লাখো মুসুল্লি

 বরিশাল ব্যুরো : লক্ষ লক্ষ মুরিদানসহ মুসুুল্লিদের আল্লাহুম্মা আমিন সধ্বনিতে আখেরী মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে গতকাল চরমোনাই দরবার শরিফের তিন দিনব্যাপী বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল সম্পন্ন হয়েছে। তিনদিনের ওয়াজ-নসিহত শেষে গতকাল বাদ ফজর বিদায়ী বয়ান সম্পন্ন করে হজরত মাওলানা রেজাউল করিম- পীর ছাহেব চরমোনাই এ আখেরীমোনাজাত পরিচালনা করেন। গত ৪দিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত লক্ষ লক্ষ মুরিদান ও মুসুল্লিগণ ছাড়াও গতকাল প্রত্যুষে বরিশাল মহানগরীথেকেছেড়েযাওয়াকয়েকটিবিশালাকৃতির
নৌযানে করে আরো বিপুলসংখ্যক মুসুল্লি এ দোয়া মোনাজাতে শরিক হন। বিশাল এ দরবার শরিফ ছাড়িয়ে কয়েক কিলোমিটার দুরেও যে যেখানে পেরেছেন দাঁড়িয়ে এৱ দোয়া মোনাজাতে শরিক হন। অনেকে গাছের ডালে বসে এবং নৌকায় বসেও মহান আল্লাহর দরবারে হাত তোলেন। বুক ফাঁটা কান্নার সাথে জীবনের সব গুণাহ থেকে পানাহ চেয়ে মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের একটু রহমত ভিক্ষা চান লাখ লাখ মুসুল্লি। এসময়ৱ সমগ্র চরমোনাই দরবার শরিফসহ সন্নিহিত বিশাল এলাকায় রোনাজারীতে এলাকার মপরিবেশ ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। অনেকেই জীবনের শেষ মোনাজাত মনে করে মহান আল্লাহর দরবারে পানাহ চান। পীর ছাহেব চরমোনাই সকল মুরিদানসহ মুসলিম মউম্মাহর জন্য আল্লাহর রহমত ভিক্ষা চেয়ে বার বারই আর্জি জানাতে থাকেন। ১৯২৪ সালে বরিশাল মহানগরী থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দুরে কির্তনখোলা নদী তীরের দরবার শরিফ প্রতিষ্ঠা করে চরমোনাইর মরহুম পীর ছাহেব হজরত মাওলানা মো. এসাহাক (রহ.) এ মাহফিলের সূচনা করেছিলেন। সে থেকে বংশ পরম্পরায় বিগত ৯০ বছর যাবত চরমেনাই দরবার শরিফে ফাল্গুন মাসের এ ইছালে ছরয়াব ও বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অন্যান্য বছরের মত এবারো দেশ-বিদেশের লক্ষ লক্ষ মুরিদানসহ মুসুল্লিবৃন্দ এ মাহফিলে অংশ নেন। গতকাল আখেরী মোনাজাত পূর্ব বয়ানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমির ও পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, যারা আল্লাহর রাসুলের নীতি অনুসরণ করে না তারা কেয়ামতের দিনে নবীজি (সা.)- এর সুপারিশ পাবে না। কালব পরিস্কার হওয়ার একমাত্র ঔষধ হচ্ছে জিকির। বেশী বেশী আল্লাহ পাকের জিকির করলে কালবের ময়লা দূর হয়। সকলকে সঠিকভাবে জিকিরে মশগুল থাকার নির্দেশ দিয়ে পীর ছাহেব বলেন, মৃত্যু পূর্বেই আখিরাতের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। কারণ যে মামালার তদবির নেই সে মামলার খালাসও নাই। তিনি বলেন, তরীকার নিয়ম মত পাঁচ ঔষধ পালন করার নির্দেশ দেন। ইবাদাত হবে একমাত্র আল্লাহর জন্য। চরমোনাইর লেবাছ লাগিয়ে যারা ধোকাবাজি করবে তারা দুুনিয়ায় ও আখেরাতে লাঞ্ছিত হবে। ইসলামের বিরুদ্ধে সমর্থন বা ভোট দেয়া তাদেরই অনুসরণ করার মত। আর যারা তার অনুসরণৱ করবে তাদের হাশর তার সাথে হবে। অতএব বুঝে শুনে সমর্থন দেয়ারও পরমর্শ দেন তিনি। পীর ছাহেব চরমেনাই তার বয়ানে আল্ল¬াহর প্রিয় বান্দা হওয়ার জন্য সমস্ত হারাম বর্জন করার নির্দেশ দেন । তিনি হিংসা, গর্ব, আত্মঅহমিকা, দুনিয়াবী লোভ, গীবতসহ অন্তরের সকল কু-রিপু বর্জন করারও নির্দেশ দেন। পীর ছাহেব বলেন, গুণাহের জন্য আল্ল-াহর নিকট শিশুর মত ক্রন্দন করতে হবে। যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কাঁদে সে চোখ জাহান্নামের আগুনে ঢোকানো অসম্ভব বলে অভিহিত করে পীর ছাহেব বলেন, যেরূপ দোহনকৃত দুধ গাভীর ওলানে ঢুকানো অসম্ভব। বা’দ ফজর আখেরী বয়ানে পীর সাহেব চরমোনাই আরো বলেন, আমাদের দায়িত্ব শুধু দাওয়াত পৌঁছিয়ে দেয়া, আমি তাই আপনাদের দাওয়াত পৌঁছে দিলাম। এখন মানা আর না মানা আপনাদের দায়িত্ব। তিনি বলেন, যারা চরমোনাই এসেছেন তারা সকল নির্দেশ মেনে চলবেন অন্যথায় চরমোনাই আসার দরকার নেই। কারণ আমরা পীর মুরীদির ব্যবসা করি না। পীর ছাহেব জানান, গত অগ্রহায়ণের মাহফিল হতে এ পর্যন্ত এ তরীকার ১,৩৩৯ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি তাদের জন্য সকলকে মন খুলে দোয়া করতে বলেন। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৩০ মিনিটের মোনাজাতে পীর সাহেব চরমোনাই বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও নিরাপত্তার পাশাপাশি বাংলার জমিনে ইসলামি হুকুমাত কায়েমের জন্যও দোয়া করেন। তিন দিনব্যাপী ওয়াজ মাহফিলে অংশ নেয়া লক্ষ লক্ষ মুসুল্লি গতকাল আখেরী মানাজাত শেষে শত শত বাস লঞ্চ ও ট্রলারযোগে নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়না হয়ে যান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন